ARTPOET.IN

কানা-খোঁড়া সংবাদ | Kana Khora Shongbad


          এল পেটুকের পালা,
যেন অতিকায় ফুটবল দুটি,
          অথবা ঢাকাই জালা।
ওজনেতে তারা কেহ নহে কম,
          ভোজনেতে ততোধিক,
বপু সুবিপুল, ভুড়ি বিভীষন-
          ভারি সাতমন ঠিক।
অবাক দেখিছে সভার সকলে
          আজব কান্ড ভারি-
ধামা ধামা লুচি নিমেষে ফুরায়
          দই ওঠে হাঁড়ি হাঁড়ি!
দাড়ি পাল্লায় মাপিয়া সকলে
          দেখে আহারের পরে ,
দুজনেই ঠিক বেড়েছে ওজনে
          সাড়ে তিন মন করে।
কানা রাজা বলে একি হল জ্বালা,
          আক্কেল নাই কারো ,
কেহ কি বোঝেনা সোজা কথা এই,
          হয় জেতো নয় হারো।”
তার পর এল কুঁড়ে দুই জন
          ঝাকার উপর চড়ে,
সভামাঝে দোহে শুয়ে চিৎপাত
          চুপ চাপ রহে পড়ে।
হাত নাহি নাড়ে, চোখ নাহি মেলে,
          কথা নাই কারো মুখে,
দিন দুই তিন রহিল পড়িয়া,
          নাসা গীত গাহি সুখে।
জঠরে যখন জ্বলিল আগুন,
          পরান কণ্ঠাগত,
তখন কেবল মেলিয়া আনন
          থাকিল মড়ার মত।
দয়া করে তবে সহৃদয় কেহ
          নিকটে আসিয়া ছুটি
মুখের নিকটে ধরিল তাদের
          চাটিম কদলি দুটি।
খঞ্জের লোকে কহিল কষ্টে,
          “ছাড়িয়া দে নারে ভাই”
কানার ভৃত্য রহিল হা করে
          মুখে তার কথা নাই ।
তখন সকলে কাষ্ঠ আনিয়া
          তায় কেরোসিন ঢালি,
কুড়েদের গায়ে চাপাইয়া রোষে
          দেশলাই দিল জ্বালি।
খোঁড়ার প্রজাটি বাপরে বলিয়া
          লাফ দিয়া তাড়াতাড়ি
কম্পিত পদে চম্পট দিল
          একেবারে সভা ছাড়ি।
দুয়ো বলি সবে দেয় করতালি
          পিছু পিছু ডাকে “ফেউ”?
কানার অলস বলে কি আপদ
          ঘুমুতে দিবিনা কেঊ?
শুনে সবে বলে “ধন্য ধন্য
          কুঁড়ে-কুল চুড়ামণি!”
ছুটিয়া তাহারে বাহির করিল
          আগুন হইতে টানি।
কানার লোকের গুণপনা দেখে
          কানা রাজা খুসী ভারি,
জমিতে দিলেই আরও দিল কত,
          টাকাকড়ি ঘরবাড়ি।

-সুকুমার রায়

error: Content is protected !!
Scroll to Top