বহুদিন হল কোন্ ফাল্গুনে
ছিনু আমি তব ভরসায়;
এলে তুমি ঘন বরষায়।
আজি উত্তাল তুমুল ছন্দে
আজি নবঘন-বিপুল-মন্দ্রে
আমার পরানে যে গান বাজাবে
সে গান তোমার করো সায়
আজি জলভরা বরষায়।
দূরে একদিন দেখেছিনু তব
কনকাঞ্চল-আবরণ,
নবচম্পক-আভরণ।
কাছে এলে যবে হেরি অভিনব
ঘোর ঘননীল গুণ্ঠন তব,
চলচপলার চকিত চমকে
করিছে চরণ বিচরণ।
কোথা চম্পক-আভরণ!
সেদিন দেখেছি খনে খনে তুমি
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতে বনতল,
নুয়ে নুয়ে যেত ফুলদল।
শুনেছিনু যেন মৃদু রিনি রিনি
ক্ষীণ কটি ঘেরি বাজে কিংকিণী,
পেয়েছিনু যেন ছায়াপথে যেতে
তব নিশ্বাসপরিমল,
ছুঁয়ে যেতে যবে বনতল।
আজি আসিয়াছ ভুবন ভরিয়া
গগনে ছড়ায়ে এলোচুল,
চরণে জড়ায়ে বনফুল।
ঢেকেছে আমারে তোমার ছায়ায়
সঘন সজল বিশাল মায়ায়,
আকুল করেছ শ্যাম সমারোহে
হৃদয়সাগর-উপকূল
ফাল্গুনে আমি ফুলবনে বসে
গেঁথেছিনু যত ফুলহার
সে নহে তোমার উপহার।
যেথা চলিয়াছ সেথা পিছে পিছে
স্তবগান তব আপনি ধ্বনিছে,
বাজাতে শেখে নি সে গানের সুর
এ ছোটো বীণার ক্ষীণ তার–
এ নহে তোমার উপহার।
কে জানিত সেই ক্ষণিকা মুরতি
দূরে করি দিবে বরষন,
মিলাবে চপল দরশন?
কে জানিত মোরে এত দিবে লাজ?
তোমার যোগ্য করি নাই সাজ,
বাসর-ঘরের দুয়ারে করালে
একি রূপে দিলে দরশন।
ক্ষমা করো তবে ক্ষমা করো মোর
আয়োজনহীন পরমাদ,
ক্ষমা করো যত অপরাধ।
এই ক্ষণিকের পাতার কুটিরে
প্রদীপ-আলোকে এসো ধীরে ধীরে,
এই বেতসের বাঁশিতে পড়ুক
তব নয়নের পরসাদ–
ক্ষমা করো যত অপরাধ।
আস নাই তুমি নবফাল্গুনে
ছিনু যবে তব ভরসায়,
এসো এসো ভরা বরষায়।
এসো গো গগনে আঁচল লুটায়ে,
এসো গো সকল স্বপন ছুটায়ে,
সে গান তোমার করো সায়
আজি জলভরা বরষায়।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর